logo
   প্রচ্ছদ  -   পুলিশ

স্মৃতি হারাচ্ছেন মাথার খুলি ভেঙে যাওয়া সেই রাজ্জাক
Posted on Apr 27, 2024 11:14:49 AM.

স্মৃতি হারাচ্ছেন মাথার খুলি ভেঙে যাওয়া সেই রাজ্জাক

‘বাবার কথায় জড়তা নেই। কিন্তু একটু একটু করে স্মৃতি হারিয়ে ফেলছেন। এখন আর সবকিছু মনে করতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের এই চিনতে পারছে, তো আবার চিনতে পারছে না। বামপাশ অসার (প্যারালাইজড) হয়ে যাওয়ায় উঠে বসতে ও হাঁটতে পারেন না। শুয়ে থাকেন সারাক্ষণ। 

মাঝে মধ্যে হুইল চেয়ারে করে ঘুরানো হয়। কেবিনের বাইরে ও হাসপাতালের নিচে যেতে চান। কিন্তু নিচে নিয়ে গেলে আবার উপরে উঠে আসতে চান তিনি।’ 

পুলিশ সদস্য নায়েক আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রেশমা আক্তার রিনি বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাবার বর্তমান অবস্থার কথা এভাবেই তুলে ধরলেন।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের ঘিরে সহিংসতা আহত হয়েছিলেন রাজ্জাক। এতে পুলিশের এক সদস্য নিহত এবং প্রায় দেড়শ’ সদস্য আহত হন। বিভিন্ন মেয়াদে চিকিৎসা নিয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন আহত সবাই। শুধু গুরুতর আহত নায়েক আব্দুর রাজ্জাক এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। ছয় মাস ধরে তার দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায়।
 
রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালের দশম তলার ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসাধীন নায়েক রাজ্জাক। গত বুধবার বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, ঘুমিয়ে আছেন তিনি। তাঁর মাথার বাম পাশের খুলি নেই। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর তার সঙ্গে কথা বলা গেল। তিনি বললেন, ভালো লাগছে না। বলেই আবার ঘুমিয়ে পড়লেন।
 
সেদিন তার সঙ্গে কী ঘটেছিল? জানতে চাইতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। শুধু এটুকুই বলতে পারলেন– বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া–পালটা ধাওয়ার সময় তার মাথা থেকে হেলমেট পড়ে যায়। এরপরই একটি ইটের টুকরা এসে লাগে তার মাথায়। এতে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এরপর তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেসব তার মনে নেই।
 
সেখানে তাঁর স্ত্রী রাশেদা বেগম ও মেয়ে রেশমা আক্তার রিনির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর স্মৃতি মোটামুটি ঠিক হয়। এরপরও মাঝেমধ্যে তিনি কাউকে চিনতে পারেন না। এতদিন হাসপাতালে থাকলেও রাজ্জাক বলেন, তিনি গ্রামে বাড়িতে ছিলেন। আর গত কয়েকদিন ধরে বলছেন, তিনি আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছেন। মাঝেমধ্যে নাতি আব্দুর রহমান রাফসিকে দেখার কথাও বলেন।
 
রাশেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওই ঘটনার দুদিন আগে বড় ছেলের সন্তান জন্ম নেয়। ভিডিওকলে নাতনিকে দেখে, আমাকে কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ২৮ অক্টোবর সমাবেশকে ঘিরে সব ছুটি বন্ধ থাকায় যেতে পারেননি। এছাড়া সাধারণত ডিউটিতে বের হওয়ার সময় তিনি কিছু জানাতেন না। সেদিন সকাল ৮টায় ফোন করে বলেন, আমি ডিউটিতে বের হচ্ছি, দোয়া করিও যাতে ভালোভাবে ফিরে আসতে পারি। পরে রাত ৮টায় একজন ফোন করে জানান, রাজ্জাক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ সময় তিনি ভিডিওকলে চিকিৎসার দৃশ্য দেখান। এরপর ওই রাতেই বড় ছেলে ও তার ছোট চাচা এসে তাকে অচেতন অবস্থায় পায়।
 
পরিবারের সদস্যরা জানান, রাজ্জাকের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়া গ্রামে। বড় ছেলে রাশেদুল ইসলাম রাজু একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে রাফিউল ইসলাম রাফি রাজশাহী কোর্ট কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। মেয়ে রেশমা আক্তার রিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়েছেন। তারা গ্রামে থাকতেন। আর রাজ্জাক আব্দুল গণি রোডের ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের ব্যারাকে থাকতেন।
 
জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর পুলিশে কনস্টেবল পদে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০০৭ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পিএমও দক্ষিণ বিভাগে বদলি হয়ে আসেন। ২০১০ সালে র‍্যাবে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে বদলি হয়ে আসেন। এখন পর্যন্ত সেখানে কর্মরত রয়েছেন। এক বছর পর অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে যাওয়ার কথা রাজ্জাকের।  
 
সংঘর্ষের সময় গুরুতর আহত রাজ্জাককে ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা পর্যবেক্ষণ করে জানান, তার মাথার খুলির হাড় কয়েক স্থানে ভেঙে গেছে। সেখানে তার মাথায় একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয় না রাজ্জাকের। পরে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ৯ নভেম্বর সেখানে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ২১২৯ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন। সেখানে বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার করে মাথার খুলির কৃত্রিম হাড় লাগানো হয়। তখন তিনি সবার সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন।
 
সর্বশেষ ১১ জানুয়ারি হাসপাতালটির একজন চিকিৎসককের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরত আনা হয় তাকে। তখন থেকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন রাজ্জাক। এর মধ্যে তার মাথার কৃত্রিম খুলিতে সংক্রমণ হওয়ায় তাকে দুই দফায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে খুলি খুলে রাখা হয়েছে।
 
রাজ্জাকের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, পুলিশ তাঁর চিকিৎসার কোনো কমতি রাখেনি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে গেছে। আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার স্যারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য পুলিশ যা করল তা নজিরবিহীন। পুলিশ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা গর্বিত।
 
রাজ্জাকের চিকিৎসার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, রাজ্জাককে আইজিপির নির্দেশে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখনও পুলিশের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা চলছে। যতদিন সুস্থ না হয়, ততদিন পুলিশ তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবেন। আমরা চাই রাজ্জাককে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। আমরা চাই না আর কোনো পুলিশ সদস্য দুর্ঘটনার শিকার হোক। তারপরও যদি কখনও কোনো পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হন, পুলিশ পরিবার তাদের পাশে থাকবেন। এছাড়া হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, কোনো দুষ্কৃতিকারী যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হাত তোলার চেষ্টা করেন। তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। 



  এই বিভাগ থেকে আরও সংবাদ

   বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের আসন্ন চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
   প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
   বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
   চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত
   মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস- ২০২৪ উদযাপন
   গণহত্যা দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোক প্রজ্বলন ও প্রতীকী ব্ল‍্যাক আউট পালন
   চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা
   জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা
   উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক-পশ্চিম বিভাগ) এর কার্যালয় পরিদর্শন করেন মান্যবর সিএমপি কমিশনার মহোদয়
   ঈদে সাধারণ মানুষের গন্তব্যে পৌঁছানো নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে: আইজিপি


  পুরনো সংখ্যা